Provat Bangla

শেখ হাসিনার সরকার গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র এমন মন্তব্য করে বিএনপি বলেছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার নিজ অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে-অবৈধ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা দিয়ে- আদায় করেছে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থন। বিশেষত নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, অসম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, নামমাত্র মূল্যে ট্রানজিট সুবিধা, পানি সমস্যার সমাধানহীনতা, গোপন আদানি চুক্তিসহ, জাতীয় স্বার্থবিরোধী অজস্র প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক লবিং। যার প্রমাণস্বরূপ শেখ হাসিনা নিজেই বলেছিল, “ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে এবং ওবায়দুল কাদের দাবি করে, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ভারতই আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বিএনপির মতো একটি সফল গণতান্ত্রিক দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছে পাশবিক হাসিনা সরকার ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্রের চিহ্নিত অংশ।’

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

তিনি বলেন, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রহসনমূলক ও ডামি। ওই নির্বাচনের উদ্দেশ্য জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল না। বরং, নির্বাচনের নামে এটি ছিল জাতির সঙ্গে একটি সহিংস প্রতারণা, যার উদ্দেশ্য অবৈধভাবে, অনৈতিকভাবে ও অসাংবিধানিকভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ, আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাস, রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশের ধ্বংসযজ্ঞ এবং বিতর্কিত দেশসমূহের হস্তক্ষেপ এই সমন্বিত অপশক্তিকে উপেক্ষা করে, জনগণের সমর্থনকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস হিসেবে ধারণ করে-গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবিচল রয়েছে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজনৈতিক নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে, গণতন্ত্রকামী শক্তিসমূহকে সাথে নিয়ে, চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিএনপির অদম্য-দুঃসাহসী নেতাকর্মীরা।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষের এই লড়াই, আজ কেবল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির লড়াই নয়। এই লড়াই, জনবিদ্বেষী সরকারের সকল দোসরের সঙ্গে বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষের লড়াই। এটি প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস ও ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী যেসব দেশী-বিদেশী দোসর, তারা সক্রিয়ভাবে গণমানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব করে যাচ্ছে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাধ্যমে। অন্যদিকে বিএনপির ক্ষমতার উৎস ও রাজনীতির সঞ্জীবনীশক্তি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ। এই দেশটি যেমন আমাদের সবার, তেমনি আওয়ামী লীগের কবল থেকে দেশকে স্বাধীন করবার দায়িত্বও আমাদের সবার। সমাজের সকল বিবেকবান মানুষ যদি স্ব স্ব অবস্থান থেকে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা রাখেন, তবে ফ্যাসিবাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

গয়েশ্বর বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশে যতবার গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে, ততবার লুণ্ঠিত সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বিএনপি। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে, আমাদের সংগ্রাম ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। এর কারণ, আওয়ামী লীগের মতো সহিংস বা অগ্নিসন্ত্রাসের রাজনীতি নয়, জনমত গঠন ও গণজোয়ার সৃষ্টিই বিএনপির রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য। দেশের প্রায় সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ দ্বারা সমর্থিত, উদার ও সহনশীল রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারক দল হিসেবে, বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বিস্তৃত সমাজের প্রতিটি স্তরে ও রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামোতে।

বাংলাদেশের বিদ্যমান অস্বাভাবিক অচলাবস্থা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে তার অনিবার্য পরিণতি ও সম্পূর্ণ দায় আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকারকে রুদ্ধ করার এই অশুভ প্রক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকটকে ঘনীভূত করে তুলবে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রমাণ করে, এই দলটি কখনোই নিয়মতান্ত্রিকভাবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা করেনি।

তিনি বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, ভোট ডাকাতির অভিনব সব পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে কলঙ্কিত ইতিহাস তৈরি করে  তারই ধারাবাহিকতায় ডামি প্রার্থী, ডামি দল, ডামি ভোটার ও ডামি পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে মঞ্চস্থ হয়েছে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন। গত ১৫ বছর ধরে গণবিদ্বেষী সরকার যে দুর্নীতি-দু:শাসন ও দমন- দুর্বৃত্তায়ন চালিয়েছে, সমাজের প্রতিটি শ্রেণী-পেশার মানুষ তাতে বৈষম্য, অবিচার ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই, আওয়ামী লীগ ও তার সুবিধাভোগী দোসররা আরও একবার জোরপূর্বক ভোটাধিকার হরণ করায়, বাংলাদেশের জনগণ ব্যথিত, মর্মাহত ও সংক্ষুব্ধ। এই জনরোষ আবারও প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুধু গণবিরোধিই নয়, এটি পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ ও অন্তঃসারশূন্য।

Related Posts